শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
উত্তরা ব্যাংকের এমডি রবিউল হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অপসারনের দাবিতে রাজপথে বিল্পবী ছাত্র জনতা ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৪ হাজার সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে দেখে কেঁদে ফেললেন মির্জা ফখরুল সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ওসমানী জাতীয় স্মৃতি পরিষদ-এর বিশেষ বাণী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খ. ম. আমীর আলী ছাত্র বৈষম্য আন্দোলনে আহতদের জন্য আর্থিক সহায়তা নিয়ে পাশে বিএনপি নেতা মোঃ সাইফুল ইসলাম নরসিংদীর মনোহরদীতে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানক্লাব ‘নেবুলাস’-এর যাত্রা শুরু প্রথমবারের মতো সচিবালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস গার্মেন্টস ব্যবসায়িদের নিঃস্ব করে কোটি টাকা প্রতারণা করে লাপাত্তা কৃষক লীগ নেতা হান্নান শেখ! টাকার বিনিময়ে বিদ্যুতের তার খাম্বা মিটার এনে দেন ইলেকট্রিশিয়ান জুলিয়ান!
সড়কে দুধ ঢেলে দুধ ক্রয় বন্ধের প্রতিবাদ

সড়কে দুধ ঢেলে দুধ ক্রয় বন্ধের প্রতিবাদ

ভিশন বাংলা ডেস্ক: হাইকোর্টের নির্দেশে দেশের সকল দুগ্ধ কম্পানি দুধ ক্রয় ও বিপণন কার্যক্রম বন্ধ রাখার প্রতিবাদে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খামারিরা সড়কে দুধ ঢেলে প্রতিবাদ করেছেন। সোমবার দুপুরে ভাঙ্গুড়া শহরের প্রবেশ মুখে অর্ধশতাধিক খামারি দুধ ঢেলে এই প্রতিবাদ জানান। এর আগে তারা সেখানে আধাঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের দুগ্ধ সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপক ও খামারিরা বক্তব্য রাখেন।

জানা যায়, এই উপজেলায় বড় ও মাঝারি আকারের সাতশ ৪৫টি দুগ্ধ খামার রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের খামারের সংখ্যা আছে প্রায় দুই হাজার দু’শ। এসব খামার থেকে দৈনিক গড়ে প্রায় ৬৫ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন করা হয়। মিল্কভিটা, ব্র্যাক, প্রাণ, আকিজ ও বারো আউলিয়া দুগ্ধ কম্পানির ২৮টি ক্রয় ও শীতলীকরণ কেন্দ্র উৎপাদিত এ দুধের ৮০ ভাগ দুধ ক্রয় করে। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশে এই দুধ ক্রয় বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছে উপজেলার দুই সহস্রাধিক দুগ্ধ খামারি।

পারভাঙ্গুড়া গ্রামের খামারি হাসিনুর রহমান বলেন, ‘আমার খামারে প্রতিদিন ৬০ লিটার করে দুধ উৎপাদন করা হয়। এই দুধ ব্র্যাক জগাতলা দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র বিক্রি করি। দুধ বিক্রির টাকার ওপর ভরসা করে আমি ব্র্যাক ব্যাংক থেকে তিন লাখ টাকা লোন নিয়ে গত তিন মাস আগে দুইটি গাভি কিনেছি। এখন ওই ব্যাংকে প্রতি মাসে আমাকে ৩০ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। কিন্তু এখন নির্ধারিত মূল্যে দুধ বিক্রি করতে না পারলে ব্যাংকের লোন পরিশোধ করবো কিভাবে? বাইরে দুধ বিক্রি করতে গেলে ছয়শ থেকে সাতশ টাকা মণ দরে দুধ বিক্রি করতে হয়। ওই টাকায় গাভি প্রতিপালন করবো, নাকি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করবো? এভাবে চলতে থাকলে গাভি বিক্রি করে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’

মানববন্ধন একই গ্রামের দুগ্ধ ব্যবস্থাপক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমরা শতভাগ খাঁটি দুধ দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রে সরবরাহ করি। দুগ্ধ কম্পানিগুলোর চিকিৎসকরা গাভিকে যে ধরনের খাদ্য খাওয়াতে বলেন, আমরা সে খাদ্যই খাওয়াই। সেখানে দুধে এন্টিবায়োটিক বা সিসা পাওয়া গেলে সেটার দায়ভার আমাদের কিভাবে থাকে? দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রের কর্মচারীরা তো আমাদের বাড়িতে গিয়ে দেখেছে যে, আমরা দুধে কোনো ভেজাল মেশাই না। কোনো সরকারি দপ্তর বা দুগ্ধ কম্পানির ঢাকা অফিসে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ক্ষতিকারক উপাদান পাওয়া গেলে তার দায়ভার কম্পানি বহন করবে। কিন্তু মহামান্য হাইকোর্ট কম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে দরিদ্র খামারিদের দুধ ক্রয় বন্ধ করতে আদেশ দিলেন। এখন আগামী পাঁচ সপ্তাহ এভাবে চললে আমরা পথে বসে যাব।’

ভাঙ্গুড়া উপজেলা পাড়ার খামারি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দুই যুগ আগে আমরা দেশি গরু পালন করতাম। সে সময় যে পরিমাণ দুধ উৎপাদন হতো, সেটা শুধু পরিবারের চাহিদা মেটাতো। তখন বিভিন্ন দুগ্ধ কম্পানি এলাকায় এসে আমাদেরকে উন্নত জাতের গাভি পালনে সহায়তা করে। কম্পানিগুলোর দেওয়া বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিতে এলাকার সাধারণ কৃষকরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে গাভি কিনে প্রতিপালন শুরু করে। এতে কৃষকদের উৎপাদিত দুধের পরিমাণ আগের চেয়ে বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। এখন নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে দুধ বিভিন্ন দুগ্ধ কম্পানিকে সরবরাহ করে বাড়তি আয় করে খামারিরা। এভাবে অনেকের পরিবার এখন স্বচ্ছল। কিন্তু বর্তমানে দুধের বাজারের এরকম নাজুক পরিস্থিতিতে দুগ্ধ খামারিরা চরম উদ্বিগ্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।’

ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র ও দুগ্ধ খামারি গোলাম হাসনায়েন রাসেল বলেন, দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে দুগ্ধ ক্রয়ে স্থানীয় দুগ্ধ কম্পানিগুলো নানা অজুহাতে দুধ ক্রয় বন্ধ রাখে। সম্প্রতি কম্পানিগুলো খামারিদের বিরুদ্ধে দুধে ভেজাল মেশানোর অভিযোগ করেছে। কিন্তু এ সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন। মেয়রের দাবি, ভাঙ্গুড়ার দুধে কোনো প্রকার ভেজাল বা রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া গেলে সেটা সংশ্লিষ্ট কম্পানির কর্মচারীরা করে।

দুধ সংগ্রহ বন্ধের ব্যাপারে ভাঙ্গুড়া মিল্কভিটার ব্যবস্থাপক আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ ও হেড অফিসের সিদ্ধান্তে সোমবার সকাল থেকে দুধ ক্রয় করা বন্ধ রয়েছে। এতে খামারিরা দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছে। এখন মহামান্য হাইকোর্ট এবং অফিসের পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত এভাবেই দুধ সংগ্রহ বন্ধ থাকবে।’

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com